নিজস্ব প্রতিবেদকঃ অবশেষে ২০ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন (১৭৪৫৯) কে শাহজাদপুর থেকে বগুড়ায় বদলি করা হয়েছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ-১ শাখার উপ-সচিব আব্দুল্লাহ আরিফ মোহাম্মদ স্বাক্ষরিত এক পত্রে তাকে এ বদলি করা হয়। একই সাথে তাকে বগুড়ার বিয়াম ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক পদে ন্যাস্ত করা হয়েছে। তার এই বদলির আদেশ খবর শাহজাদপুরে ছড়িয়ে পড়লে ভুক্তভোগিদের মধ্যে সস্তি ফিলে আসে। অনেকের মাঝে উল্লাস করতে দেখা যায়।সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মাহবুবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এটা তার শাস্তিমূলক বদলি নয়, এটা তার নিয়মিত বদলি।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন বদলির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তার ব্যাচের এখনও পদন্নতি শুরু হয়নি। তাই তাকে নিয়মিত বদলি করা হয়েছে। এটা তার কোন শাস্তিমূলক বদলি নয়।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১০ মার্চের দিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের নামে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন কতিপয় প্রভাবশালীর যোগ-সাজসে শাহজাদপুর কাছারিবাড়ি সড়ক সংলগ্ন ইউএনওর সরকারি বাসভবনের সামনে জায়গায় ১১ কক্ষ বিশিষ্ট মার্কেট নির্মাণ করে প্রায় ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা শুরু করেন। একাধিক জাতীয় পত্রিকায় এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হলে সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর মেরিনা জাহান করিতার নির্দেশে তা বন্ধ হয়ে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিক মো: মুমীদুজ্জামান জাহান ও তার পরিবারকে হুমকি প্রদর্শন করা হয়। অপরদিকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের জগতলা (কৈজুরি-সোনাতনী) খেয়াঘাটের বাংলা ১৪৩০ সালের ইজারা বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলে বিজ্ঞপ্তির সকল শর্ত মেনে গত ৩০ মার্চ ড্র এর দিনে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা দরপত্র দাখিল করে প্রথম দরদাতা বিবেচিত হন গুপিয়াখালি গ্রামের মোজাহার আলী মোল্লার ছেলে আবু বক্কার সিদ্দিক। এছাড়া ভাটপাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম মাঝি ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯৯৯ টাকা দরপত্র দাখিল করে দ্বিতীয় দরদাতা হিসাবে গণ্য হন। তারপরেও গত ৩ এপ্রিল শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন প্রভাবশালীদের যোগসাজসে অবৈধ ভাবে প্রথম দরদাতা আবু বক্কার সিদ্দিককে কৌশলে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় দরদাতা সাইফুল ইসলাম মাঝিকে ঘাট ইজারা প্রদান করেন। এতে সরকার ১ লাখ ৯০ হাজার ১ টাকা রাজস্ব হারায়। এ ঘটনায় গুপিয়াখালি গ্রামের মোজাহার আলী মোল্লার ছেলে আবু বক্কার সিদ্দিক বাদী হয়ে গত ১২ এপ্রিল শাহজাদপুর চৌকি আদালতে অপর প্রকার মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১২৩/২০২৩ইং। গত ১৩ এপ্রিল সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক সোহেল রানা মামলাটি আমলে নিয়ে ওই ইজারা স্থগিত করে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন ও ভাটপাড়া গ্রামের শহিদ আলীর ছেলে দ্বিতীয় দরদাতা সাইফুল ইসলাম মাঝিকে শোকজ করেন। ১৬ এপ্রিল শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আদালত প্রথম দরদাতাকে ঘাট বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। অপরদিকে আদালতের আদেশ অমান্য করে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের জগতলা (কৈজুরি-সোনাতনী) খেয়াঘাট দ্বিতীয় দরদাতার কাছে ইজারা প্রদানের প্রতিবাদে গত ১৪ এপ্রিল শুক্রবার দুপুরে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসি শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিনের বিরুদ্ধে জগতলা বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এ ছাড়া শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন ২০২২ সালের ৬ অক্টোবর শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে যোগদান করার পর থেকে তার অধিনস্ত কর্মকর্তা কর্মচারিদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। তিনি গত ২৩ জানুয়ারী সোমবার দুপুরে তার নিজ কার্যালয়ে শাহজাদপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের সাথেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন বিকেলে শাহজাদপুর প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও নিন্দা ও প্রাতবাদের ঝড় উঠে। সর্বশেষ গত ১৯ জুলাই বুধবার দুপুরে বেসরকারি সংস্থা ইউডিপিএস এর কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুস রিপন তার অফিসিয়াল কাজে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিনের সাথে দেখা করতে গেলে তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন ও তাকে অপমান অপদস্ত করে অফিস থেকে তাড়িয়ে দেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। এদিকে এলাকাবাসি মনে করেন, তার নানা অপকর্ম ও অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগের কারণে তাকে এ বদলি করা হয়েছে।