নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সম্পর্কে বিভিন্ন নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন অনেকেই। বিশেষ করে শিক্ষা-গবেষণার ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণের কোন মনোযোগ না থাকার বিষয় সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে মুলধারার গণমাধ্যমেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে দেখা যায়।
এরকম নেতবাচক ভ্রান্তি দূর করতে সক্ষম হয়েছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: শাহ্ আজম। গুগল স্কলারের তথ্য অনুযায়ী রবীন্দ্র উপাচার্য প্রফেসর শাহ্ আজমের গবেষণাপত্রের সাইটেশন একহাজারের উপরে পৌঁছেছে।
প্রফেসর ড. মো: শাহ্ আজমের গুগল স্কলার একাউন্টে প্রবেশ করে দেখা যায় ২০০৭ সাল থেকে ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত কিউ ওয়ান ক্যাটাগরির জার্নালে অর্ধ শতাধিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। একইসাথে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে নিবন্ধ উপস্থাপনের পাশাপাশি তিনি আন্তর্জাতিক অনেক কনফারেন্সের মডারেটর ও চেয়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন।
গুগল স্কলারে সহস্রাধিক সাইটেশনের বিষয়ে প্রফেসর শাহ্ আজমের সাথে কথা বলে জানা যায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-গবেষণার পাশাপাশি সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমের উপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রশাসনিক কাজে মনোনিবেশ করতে যেয়ে তার ব্যক্তিগত গবেষণা অনেকটাই বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। তদুপরি গুগল স্কলারে সহস্র সাইটেশন নি:সন্দেহে আনন্দের বিষয়।
উপাচার্য শাহ্ আজমের গবেষণার ক্ষেত্রে আগ্রহ রয়েছে ইনোভেশন, স্ট্র্যাটেজি, লিডারশিপ এবং সার্ভিস রিসার্চের উপর। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শাহ্ আজম আরও বলেন, বাঙালি জাতির পিতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বিশ্বকবির নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করেছেন তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। এ কারনে আমরা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যেন নির্বিঘ্নে শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারে সে বিষয়ে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।
সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠার আট বছরে পা দিলেও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় এখনও নিজস্ব জমি পায়নি। শাহজাদপুরের তিনটি কলেজের একাংশে পাঁচ বিভাগের ক্লাশ পরিচালিত হয়। যদিও উপাচার্য শাহ্ আজমের প্রচেষ্টায় নতুন একটি ভবন ভাড়া নিয়ে সেটিকে তৃতীয় একাডেমিক ভবন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা অধীর আগ্রহে নিজেদের জমিতে ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য অপেক্ষা করছেন। যদিও কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের উপর আলোচনা করেছেন।
নিজস্ব জমি না থাকা স্বত্বেও রবীন্দ্র উপাচার্য প্রফেসর শাহ্ আজমের প্রচেষ্টায় সফলতার সাথে এখন পর্যন্ত দুইটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজন করেছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্নের তিনটি বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্নাতক সম্পন্ন হয়েছে এবং দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীদেরও স্নাতক খুব দ্রুতই সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদী প্রফেসর শাহ্ আজম।
প্রফেসর শাহ্ আজমের সুদক্ষ নেতৃত্বে শিক্ষা-শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো: ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, উপাচার্য হিসেবে প্রফেসর শাহ্ আজম স্যার একজন অসাধারণ মানুষ। প্রশাসনিক নেতৃত্বের পাশাপাশি তিনি অনেক উঁচুমানের একজন গবেষক। আর এর প্রমাণ গুগল স্কলারেই ফুটে উঠেছে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে তিনি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর শাহ্ আজমের সাফল্যের জন্য শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
প্রফেসর শাহ্ আজম স্যারের মতো এরকম উঁচুমানের শিক্ষাবিদ ও গবেষকের সান্নিধ্য রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়কে সমৃদ্ধ করেছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন ফখরুল ইসলাম।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক শাহ্ আজম কৃতিত্বের সাথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করে ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ (আইবিএস) থেকে ২০০৬ সালে এমফিল এবং ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।
প্রফেসর শাহ্ আজম সেন্টার ফর কমিউনিকেশন ইকোনমিকস এন্ড ইলেকট্রনিক মার্কেট রিসার্চ (সিইইএম), অস্ট্রেলিয়ার সহযোগী গবেষক ছিলেন। এর আগে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২১ সালে তিনি ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালে তিনি রাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শৈশব থেকে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণকারী ড. শাহ্ আজম সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের এডি সাইন্টিফিক ইনডেক্সের মার্কেটিং বিষয়ের র্যাংকিং অনুযায়ী দেশসেরা গবেষকের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: শাহ্ আজম।